রক্ত দান !-
দুর্ঘটনায় আহত, ক্যান্সার বা অন্য কোন জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান জন্মের সময় অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রক্তের প্রয়োজন হয়।
রক্তের অভাবের কারণে প্রতিবছর বহু রোগীর প্রাণ সংকটের মুখ পড়ে। এই সময়ে চাইলেই রক্ত দিয়ে একজন মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। এজন্য একে বলা হয় পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও নি:স্বার্থ উপহার।
কারা রক্ত দিতে পারবেন ?
- ১৮ থেকে ৬০ বছরের যেকোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন।
- যাদের ওজন ৫০ কিলোগ্রাম কিংবা তার বেশি।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলে (পুরুষের ন্যূনতম ১২ .৫ গ্রাম/ডে.লি. ও নারীদের ১১ গ্রাম ডে.লি.) ।
- শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে (৯৯.৫ ফারেনহাইটের নিচে)
- নাড়ির (পালস) গতি ৭০ থেকে ৯০ এর মধ্যে এবং রক্তচাপ (ব্লাড প্রেসার) স্বাভাবিক থাকলে।
রক্ত দেওয়ার চার মাস পর আবার রক্ত দিতে পারেন।
কারা রক্ত দিতে পারবেন না ?
- ক্রনিক ডিজিজ যেমন উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত ফুসফুসের রোগ অ্যাজমা, হাঁপানি এবং যেকোনো জটিল রোগ যাদের রয়েছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না ।
- যাদের চর্মরোগ রয়েছে তারা ।
- রক্তবাহিত জটিল রোগ, যেমন—ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস, এইডস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, টাইফয়েড ও বাতজ্বর থাকলে রক্তদান করা যায় না।
- নাড়ির স্পন্দন (পালস), ব্লাড প্রেশার এবং দেহের তাপমাত্রা চেক করতে হবে, স্বাভাবিক না থাকলে রক্ত দেওয়া উচিত নয়।
- যারা কোনো বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছেন। যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক, কেমোথেরাপি, হরমোনথেরাপি ইত্যাদি।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে রক্ত দিতে পারবেন না। (পুরুষের ন্যূনতম ১২.৫ গ্রাম/ ডে.লি. নারীদের ১১.৫ গ্রাম/ ডে.লি.) - রক্তদানের আগের ছয় মাসের মধ্যে যদি ট্যাটু করানো হয়, তাহলেও রক্ত দেওয়া যাবে না।
- রেবিজ়, হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়ার পর কম করে ছ’মাস পরে রক্তদান করা উচিত। তবে কোভিডের টিকা নেওয়ার দু’ থেকে তিন সপ্তাহ পর রক্ত দান করা যেতে পারে বলে কোনো কোনো ডাক্তার মতামত দিয়েছেন।
- নারীদের মধ্যে যারা গর্ভবতী এবং যাদের ঋতুস্রাব চলছে।
- সন্তান জন্মদানের পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত।
- অন্তঃসত্ত্বা নারী
- যাদের ছয় মাসের মধ্যে বড় কোনো অপারেশন বা বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়েছে।
রক্ত গ্রহণ এর পূর্বে কিছু সতর্কতাঃ-
- অরক্ষিত যৌন মিলন সম্পর্কে জানা।
- বিদেশে ভ্রমণের ইতিহাস জানা।
- কোনও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তের নম্বর খেয়াল রাখতে হবে৷
- কবে সেই রক্তটি নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়টিও খুঁটিয়ে দেখা উচিত৷
- পাশাপাশি, ব্লাড ব্যাঙ্কের ওই রক্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ অবশ্যই খেয়াল করা জরুরি৷ কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই রক্ত নিলে রোগীর শরীরে নেগেটিভ প্রভাব পড়বে৷
- রক্তের উপাদানের রূপ অর্থাৎ কম্পোনেন্ট ফর্মও ভাল করে দেখে নিয়ে তবে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনতে হবে৷
রক্ত দানের পূর্বে কিছু সতর্কতাঃ–
- কাকে রক্ত দান করছেন তা জানুন ।
- যেখানে দিচ্ছেন সে প্রাতিস্থানের অনুমোদন আছে কি না
- বিশুধ্য যন্ত্র বা নুতুন সুই ব্যবহারে সতর্কতা
- যেসব রক্তদাতা অ্যাসপিরিন বা এনএসএইড সেবন করেছেন, তাঁদের অন্তত তিন দিন ওষুধ বন্ধ রেখে রক্তদান করতে হবে।
উপকারিতাঃ–
রক্তদান স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত উপকারী ,
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
- বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা তৈরির হার বেড়ে যায়। এতে অস্থিমজ্জা (বোনমেরু) সক্রিয় থাকে। দ্রুত রক্ত স্বল্পতা পূরণ হয়।
- রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়, এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- রক্ত দিলে যে ক্যালোরি খরচ হয়, তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শরীরে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি বা এইডসের মতো বড় কোন রোগ আছে কি না, সেটি বিনা খরচে জানা যায়। - রক্তদাতার যদি নিজের কখনো রক্তের প্রয়োজন হয় তাহলে ব্লাড ব্যাংকগুলো তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়।
রক্ত দেয়ার পরে কিছু সতর্কতা –
- রক্ত দেয়ার পড়ে পর্যাপ্ত পানি করতে হবে ।
- রক্ত দেয়ার পর কিছুটা মাথা ঘোরাতে পারে। এটা স্বাভাবিক। অন্তত ১০-১৫ মিনিট শুয়ে থাকুন ।
- হাঁটাহাঁটি না করে অন্তত ১৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ
- রক্তদাতা যদি ঘামতে থাকেন এবং অস্থিরতা হয়, তবে তাকে স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞগণ।